সহানুভুতি
অজয় হালদার
প্রবল শীতের রাত। ঠিক দশটা পঁচিশ মিনিট সুবর্ণবাবু
তার কর্ম সেরে গাড়ি করে বাড়ি ফিরছিলেন।ঝড় বৃষ্টি প্রবল শীত যাই হোক না কেন
সমস্ত প্রতিকূল পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করেই তাকে এগিয়ে যেতে হয়। এদিন ও তার
ব্যতিক্রম ছিল না। এদিন পরিবেশ ছিল অন্যদিনের থেকে একটু আলাদা সাজে
সজ্জিত।চারিদিকে ঘন কুয়াশার চাদরে আচ্ছন্ন। মাঝে মাঝে ঠান্ডা বাতাস প্রবল বেগে
প্রবাহিত হচ্ছে আর কুয়াশার জল গাছ পাতা থেকে টপটপ করে মাটিতে পড়ছে। মনে হচ্ছে
বর্ষাকালে হওয়া গুড়ি বৃষ্টি। রাস্তায় বাজারে জনমানবের সংখ্যা খুব বেশি নয়। এই
ঠান্ডায় সকলেই তাদের নিজেদের সুরক্ষার জন্য গরম পোশাকে এবং নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে
ঘরের মধ্যে জেলখানার কয়েদির মত।অনেকে শীতের প্রকোপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আগুন
জ্বালিয়ে উত্তাপ গ্রহণ করছে। এমনকি রাস্তার পশুরাও আশ্রয় নিয়েছে কোন নিরাপদ
স্থানে।
সুবর্ণবাবু ঘন কুয়াশার মধ্যে হঠাৎ গাড়ি থামালেন
এবং গাড়ি থেকে নেমে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। আর কিছু একটা প্রত্যক্ষ করলেন।
কেননা এ রাস্তার অনেকটা তার পরিচিত লোকজনও তেমন অপরিচিত নয়।কিছুক্ষণ পর তিনি কাছে
এগিয়ে গেলেন এবং দেখলেন জীর্ণ শীর্ণ রুক্ষ চেহারা সম্পন্ন এক অপরিচিত পুরুষ
মানুষকে। এতক্ষণে তিনি কুয়াশাচ্ছন্ন অন্ধকারের অল্প আলোয় তাকে ভালোমতো দেখতে
পারেননি। এদিকে উত্তরের ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি দেখলেন অসহায় মানুষটির
সারা দেহে বিদ্যুৎ পিষ্ট কাঁপুনি। ভয়ে নয়- প্রবল শীতে। সুবর্ণবাবু স্নেহের স্বরে
জিজ্ঞাসা করলেন- 'তোমার কী হয়েছে?'
'এত ঠান্ডার রাতে তুমি এখানে কি করছো'? মানুষটি
কোন উত্তর দেয় না।দুই হাত দুই বগলের রেখে মাথা দুই হাতের সংলগ্ন বুকের মাঝে চেপে
রাখে এবং ঠান্ডায় কাঁপতে থাকে। সুবর্ণবাবু পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন 'তোমার বাড়ি কোথায়?' দীর্ঘ ক্ষণ চুপ থাকার পর
ভাঙ্গা ভাঙ্গা স্বরে মানুষটি উত্তর দিলেন 'আমার বাড়ি নেই
বাবু'।এই কথাটি শুনে সুবর্ণবাবুর মনের মধ্যে একটা ধাক্কা
দিল।তিনি আবারও জিজ্ঞাসা করলেন 'তোমার শীতের পোশাকই বা
কোথায়?' কিছু সময় পর ব্যক্তিটি বললো 'ছিল একটা গরীবকে দিয়েছি ওর খুব শীত করছিল তো তাই'।একথা
শুনে সুবর্ণবাবু বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। ...