শীতের সৌন্দর্য্য
শম্পা দাস
ঋতু বসন্ত যেমন জীবকূলকে আনন্দ প্রদান করে, তেমন শীত ঋতু ও নানান আনন্দের পসরা সাজিয়ে আসে পৃথিবীর বুকে। সমস্ত
রকম বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান যেমন - খাওয়া দাওয়া, ঘোরা বাড়ানো, বা চড়ুইভাতি অথবা ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সবই
কিন্তু শীতেই সম্ভবপর হয়।
ভ্রমণ পিপাসুরা কিন্তু উত্তরে হাওয়ার দাপটকেও অগ্রাহ্য
করে এগিয়ে চলে অজানাকে জানার নেশায়। এক কথায় শীত ঋতু অনেকের কাছে যেমন আনন্দদায়ক
তেমনি আরামদায়ক।
আজ অনেক বছর পর শীতকালের একটি দিনের কথা খুব মনে পড়ছে।
তখন আমি নবম শ্রেণীতে পড়ি।
সরস্বতী পূজা হোক বা বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অথবা বাৎসরিক
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সবেতেই নবম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের প্রধান্য বেশি থাকে। আমি একটি
বাংলা মাধ্যম বালিকা বিদ্যালয়ে পড়তাম। হঠাৎ জানা গেল ক্যাম্প হবে। সবার মনেই আনন্দের
ঢেউ খেলে গেল। রবিবার ভোর ৫:৩০ টার সময় বিদ্যালয়ে উপস্হিত হতে
হবে। সারাদিন নানা ক্রীড়াসূচি থাকবে। তাছাড়া অনেক ছাত্রীরা আসবে অন্য বিদ্যালয় থেকে।
সে এক ভীষণ উত্তেজনা সবার মধ্যে।
মাসটা ছিল ডিসেম্বর। সেবার ঠান্ডা বেশ ভালোই পড়েছিল।
আমার বিদ্যালয় বাড়ি থেকে হাঁটা পথে ৩০ মিনিট এর মতো। আগেই হিসেব কষলাম ৫:০০ টার সময় বাড়ি থেকে রওনা দিলেই হবে।
নির্দিষ্ট দিনে বাবার সঙ্গে হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে
চললাম। রাস্তায় বেরতেই বুঝতে পারলাম হিমেল হাওয়াগুলো আমাদের যেন আষ্ঠে পিষ্ঠে বেঁধে
ফেলেছে। শীতের চাদর গায়ে জড়িয়ে হাঁটা শুরু করলাম। সে এক অদ্ভুত অনুভূতি। ল্যাম্পোস্টের
বাতি গুলো সব জ্বলছে। রাস্তা জনশুন্য। মনে হচ্ছে যেন গভীর রাত্রি। শুধু আমাদের জুতোর
শব্দ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। রাস্তা গুলো যেন কেমন শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।
রাস্তার পাশের গাছ গুলো হিমেল হাওয়ায় হালকা ভাবে মাথা নাড়াচ্ছে। মনে হচ্ছে ওরাও যেন আমাদের
দিকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ঘাসের আগায় শিশিরের বিন্দুগুলো যেন মুক্তোর মতো
জ্বলজ্বল করছে। আকাশ ভরা পূর্ণচন্দ্র। তারারা ও মিটমিট করছে। এই নিশ্তব্দ পরিবেশে ওরা
যেন আমাদের সঙ্গে পথ চলছে। চন্দ্রিমা আজ যেন তার জোৎসনার আলোতে সমস্ত পৃথিবীটাকে কেমন
মনোমুগ্ধ করে রেখেছে। সমগ্র ধরাধাম যেন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
বিদ্যালয়ে পৌঁছানোর একটু পরে সূর্য্যদেব স্বমহিমায় আবির্ভূত
হলেন। এক স্বর্গীয় অনুভূতি সাক্ষী হলাম। প্রথমে রাতের অন্ধকারের বুক চিরে হালকা আলোর
রেখা ছড়িয়ে পড়লো পুব আকাশে। পাখির কলতানে ভোরে উঠলো প্রকৃতি। তাদের কলকাকলিতে বার্তা
এল রবির আগমনের। রবির কিরণমালায় আলোকময় হয়ে উঠলো চতুর্দিক। সরোবরের পদ্মকলিরাও হাই
তুলে চোখ মেললো। প্রভাত রবির ছোঁয়ায় ফুলেরাও জেগে উঠলো দলে দলে। তাদের মিষ্টি সুবাস
ছড়িয়ে পড়লো চতুর্দিকে। তার সঙ্গে সমীরণের আলতো ছোঁয়াতে অপরূপ রূপে সজ্জিত হলো এ ধরিত্রী।
এক কোথায় অনির্বচনীয় সে শোভা। সারাটাদিন খুব ভালো ভাবেই কেটেছিল নানান নতুন নতুন অভিজ্ঞতার মধ্যে
দিয়া।
একটু একটু করে পথ চলতে চলতে অনেক গুলো বছর পেরিয়ে এসেছি।
শীত ঋতু কে অনেক কাছ থেকে অনুভব করেছি বার বার। কিন্তু সেদিনের প্রকৃতির সেই অপরূপ
শোভা আজও অম্লান হয়ে আছে আমার মনের মনিকোঠায় যা আজ খাতার পাতায় ধরা দিলো।