শীতের মজা সত্যিই অতুলনীয়
রতন বসাক
আমাদের দেশে বারো মাসে ছ'টা ঋতুর পরিবর্তন হয়। এর মধ্যে শীতকালটাই আমার বেশ ভালো লাগে।
অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি থেকে মাঘ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত শীত অনুভব করা যায়। এই
সময় উত্তুরের হিমেল হাওয়া বইতে থাকে ধীরে ধীরে। মাঝে মাঝে আবার হঠাৎ সাদা
কুয়াশার চাদরে আশপাশের সব ঢেকে যায়, কিছুই নজরে আসে না।
শীতকালে বাজারে শাক-সবজির ভরপুর দেখা যায়।
জিনিসপত্রের দাম মোটামুটি সাধারণ মানুষের আয়ত্তের মধ্যেই থাকে। বিভিন্ন রকমের
সবুজ সবজি এই সময় বেশ ভালোই খাওয়া হয়। লোভের বশে একটু বেশি খেলেও শরীরের ততটা ক্ষতি
হয় না। এই সময় সব কিছুই গরম গরম খেতে বেশ ভালো লাগে। গরম চা তো যতবারই খাও মন আর
ভরে না। এর সাথে গরম গরম তেলে ভাজা সত্যিই অতুলনীয়।
ঠান্ডা ঠান্ডা খেজুর গাছের রস সকাল বেলা খেতে যে কি
ভীষণ ভালো লাগে, তা বলে বোঝানো যাবে না। আজকাল তো
তেমন একটা দেখাই যায় না খেজুরের রস বাজারে; যদিও পাওয়া
যায় সেটায় ভেজাল দেওয়া থাকে। আর এই খেজুর রসের গুড় দিয়ে তৈরী পিঠে পায়েস খেতে
খুব ভালো লাগে। ঠান্ডা বাসি পিঠে খেতে তো আরো বেশি ভালো লাগে। বাজারে বিভিন্ন
মিষ্টির দোকানে নলেন গুড়ের নানা রকমের সুস্বাদু মিষ্টান্ন সত্যিই লোভনীয়।
এই শীতকালে শহরে গ্রামগঞ্জের ফাঁকা জায়গায় মেলা ও
সার্কাসের আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যাবেলায় মেলায় ঘুরতে ও সার্কাস দেখতে ভীষণ
মজাদার। এই সময় পাড়ায় পাড়ায় বিভিন্ন ক্লাবের উদ্যোগে রক্তদান উৎসবেরও আয়োজন
করা হয়। দূর-দূরান্ত থেকে লোক এসে বিভিন্ন পিকনিক স্পটে, পিকনিক করতে ভালোবাসে ছুটির দিনগুলোতে। একসাথে মিলে রান্না
করে সবাই মিলে বসে খাওয়া, সত্যিই বেশ ভালো লাগে।
অনেক সময় শীতকালের তাপমাত্রা অনেক নিচে নেমে যায় আর প্রচন্ড ঠান্ডা পরে। সেই
সময় জীবজন্তু ও ঘরের গৃহপালিত পশুদের খুবই কষ্ট হয়। এছাড়া শহরের ফুটপাথে দরীদ্র
শ্রেণীর যেসব লোকেরা দিন কাটায় তাদের খুব করুণ অবস্থা হয়ে যায়। অতিরিক্ত ঠান্ডায়
অনেক সময় বয়স্ক মানুষ প্রাণ ত্যাগ করে দেয়। দরীদ্র শ্রেণীর মানুষদের গরম জামা
কাপড় যথেষ্ট পরিমাণে না থাকায়, তাদের সত্যিই
ঠান্ডায় ভীষণ কষ্ট হয়। অতিরিক্ত ঠান্ডায় কষ্টের জন্য তারা শীতকালটাকে অভিশাপ
হিসেবে দেখে।
তবে আশার কথা আজকাল বিভিন্ন পাড়ার ক্লাব থেকে আশেপাশের বিভিন্ন বাড়ি থেকে
পুরনো ও ব্যবহৃত গরম জামা কাপড় কালেকশন করে। সেগুলোকে ধুয়ে সেই সব দরীদ্র
শ্রেণীর প্রয়োজনীয় মানুষদের দেওয়ার ব্যবস্থা করে থাকে। এছাড়া কিছু ব্যবসায়িক
সংস্থা থেকেও গরম জামা কাপড় বিতরণের ব্যবস্থা করে থাকে মাঝেমধ্যে। আবার আজকাল
কিছু রাজনৈতিক দল থেকেও এসব গরীব মানুষদের জন্য গরম জামাকাপড় ও কম্বল দেওয়ার
ব্যবস্থা করে থাকে।
শীতকালটা আরও একটা বিশেষ কারণে ভালো আমি মনে করি। সেটা হলো এই সময় মানুষের
সুস্থ থাকে ও অসুখ-বিসুখ খুবই কম হয়। এছাড়া এই সময় যতই কষ্টের কাজ করো না কেনো, ততটা খাটনির কাজ বলে মনে হয় না। সন্ধ্যা বেলা কিংবা সকাল
বেলা গাছের পুরনো ডালপালা জোগাড় করে; সেগুলোতে আগুন
জ্বালিয়ে তার উত্তাপ নিতে সত্যিই ভীষণ ভালো লাগে!
মোটামুটি সব দিক দিয়ে বিচার করলে শীতকালটাই আমার বেশি ভাল লাগে অন্যান্য ঋতুর
থেকে। কিছুটা কষ্ট হলেও থেকে খেয়ে শুয়ে বসে, বেশ
আরাম করা যায় এই শীতকালে। আর রাতে একবার গরম কম্বলের মধ্যে ঢুকলে তো কথাই নেই! কি
আরামে যে রাতটা কেটে যায়, বোঝাই যায় না।